আমি যখন পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের কথা ভাবি, তখন সনাতন ধর্মের মূলনীতিগুলো আমার মনকে ছুঁয়ে যায়। আপনারও হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সনাতন ধর্মে কি এমন কোনো নিয়ম আছে যা আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণে সাহায্য করে? বাস্তবে, সনাতন ধর্ম প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাশীল এবং এর শিক্ষা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে পরিবেশ রক্ষার পথ নির্দেশ করে।
সৃষ্টির সাথে ঐক্য: প্রকৃতি এবং মানুষ একাত্ম
সনাতন ধর্মের প্রাথমিক ধারণা হল মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে এক গভীর সংযোগ রয়েছে। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে:
“মাতা ভূমি: পুত্রোহং পৃথিব্যা:”
“পৃথিবী আমার মা, এবং আমি তার সন্তান।”
আপনার কী মনে হয়, সন্তানের মতো যদি আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, তবে কি পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে না? এই শ্লোক আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির যত্ন নেওয়া আমাদের এক পবিত্র দায়িত্ব।
সনাতন ধর্মে পরিবেশ রক্ষার উদাহরণ
১. গাছপালা রোপণ ও সংরক্ষণ
আমরা শুনেছি, “বৃক্ষো রক্ষতি রক্ষিতঃ”, অর্থাৎ গাছ রক্ষা করলে গাছও আমাদের রক্ষা করে। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। সনাতন ধর্মে বৃক্ষ রোপণ একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচিত। মাতঙ্গী পুরাণে বলা হয়েছে যে একটি গাছ লাগানো মানে দশজন সন্তানের জন্ম দেওয়ার সমান পুণ্য।
আপনার জীবনেও কি একটি গাছ রোপণ করার অভিজ্ঞতা আছে? যদি না থাকে, তবে এখনই একটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করুন।
২. জল সংরক্ষণ
জলকে সনাতন ধর্মে দেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অথর্ববেদে বলা হয়েছে:
“আপঃ স্বস্তয় অনমস্যথ:”
“জলই কল্যাণের উৎস।”
আপনি যখন অপ্রয়োজনীয়ভাবে জল অপচয় করেন, তখন মনে রাখুন যে এটি প্রকৃতিকে অপমান করার শামিল। তাই প্রতিদিনের কাজে জল সংরক্ষণে মনোযোগ দিন।
৩. পশু ও প্রাণীর প্রতি দয়া
গো-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্য প্রাণীদের প্রতি দয়া দেখানোর শিক্ষাও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের অংশ। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে:
“অহিংসা পরমো ধর্মঃ”
“অহিংসাই সর্বোচ্চ ধর্ম।”
আপনি যদি মাংস খাওয়া কমিয়ে দেন বা শাকাহারি খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাহলে তা শুধুমাত্র পরিবেশের উপকারই করে না, বরং আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার
ভগবদ্গীতাতে বলা হয়েছে:
“যুক্তাহারবিহারস্য যুক্তচেষ্টস্য কর্মসু।”
“উপযুক্ত ভোগ এবং ব্যবহারের মধ্যেই ভারসাম্য রয়েছে।”
এই শিক্ষা থেকে আমরা শিখি যে, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার সময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার পরিহার করলেই পরিবেশের উপর চাপ কমানো সম্ভব।
আপনার জন্য কিছু বাস্তবধর্মী পরামর্শ
আপনি যদি পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন শুরু করতে চান, তবে এই কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- নিজের বাড়িতে একটি ছোট্ট বাগান তৈরি করুন।
- প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার করুন।
- গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন।
- ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করার সময় বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করুন।
উপসংহার
পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন শুধু একটি আধুনিক ধারণা নয়; এটি সনাতন ধর্মের শাশ্বত শিক্ষা। আপনি যদি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং তার প্রতি দায়িত্বশীল হন, তবে সেটি আপনার ধর্মীয় কর্তব্য পূরণ করার মতোই মহৎ কাজ।