আমাদের জীবনে ধর্ম এবং রাজনীতি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ধমনীতি বা ধর্ম এবং রাজনীতির সংমিশ্রণ একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য অত্যাবশ্যক। আমি যখন সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলি অধ্যয়ন করি, তখন বুঝতে পারি যে এই দর্শন কেবল ব্যক্তিগত আত্মার উন্নতির জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের কল্যাণের জন্য এক অভিন্ন পথ দেখায়।
ধর্ম এবং রাজনীতি: দুটি অঙ্গ এক সূত্রে গাঁথা
আপনি কি কখনও ভেবেছেন, সনাতন ধর্ম রাজনীতিকে কীভাবে দেখেছে? ‘যত্র ধর্মস্ততঃ জয়ঃ’—যেখানে ধর্ম আছে, সেখানেই বিজয়। এই উক্তি পরিষ্কারভাবে বোঝায় যে ন্যায়, সততা এবং মানবকল্যাণ সর্বদা নেতৃত্বের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত।
ধর্ম শুধু পূজা-অর্চনার বিষয় নয়; এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাজনীতি যদি নেতৃত্বের পদ্ধতি হয়, তবে ধর্ম সেই পদ্ধতিকে ন্যায়পরায়ণতা, করুণা এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পরিচালনা করার উপায়। মহাভারতের একটি উদাহরণ এখানে খুব প্রাসঙ্গিক। আপনি নিশ্চয়ই ভীষ্মের কথাগুলি মনে করতে পারবেন, যেখানে তিনি বলেন, “ধর্মের ওপরে যদি রাজ্য চলে, তবে প্রজারা সুখী হয়।”
সনাতন ধর্মে নেতৃত্বের আদর্শ
সনাতন ধর্ম রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন নেতৃত্বের কথা বলে, যারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবে। শ্রীরামচন্দ্রকে যদি দেখি, তিনি শুধু একজন রাজা ছিলেন না; তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক। যখন রাজ্যের প্রজারা তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, “জনতা যদি সুখী হয়, তবে সেই রাজা প্রকৃত অর্থে সফল।”
আপনার নিজের জীবনের প্রতিদিনের সিদ্ধান্তেও এই ধমনীতির চর্চা করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি আপনার পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন, তখন যদি আপনি ন্যায়পরায়ণতা এবং সমতা বজায় রাখেন, তবে সেটি সনাতন ধর্মের পথ।
কুরুক্ষেত্রের শিক্ষা: ধর্ম বনাম অধর্ম
গীতার শিক্ষা কি আমাদের রাজনীতি ও নৈতিকতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে না? শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, “ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা করতেই হবে। এটি শুধু কর্তব্য নয়, এটি আমাদের আত্মার মুক্তির পথ।”
রাজনীতি প্রায়ই ক্ষমতার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু সনাতন ধর্মে এটি ভিন্নভাবে দেখা হয়। নেতৃত্ব বা ক্ষমতা কেবল একটি মাধ্যম, যার দ্বারা আপনি সেবা করতে পারেন। আপনি যদি দেখেন, আজকের দিনে রাজনীতি যখন লোভ বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে কলুষিত হয়, তখন সনাতন ধর্মের শিক্ষা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
আধুনিক জীবনে সনাতন ধমনীতির ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আপনি সনাতন ধর্মের ধমনীতি প্রয়োগ করতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি যদি একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হন, তবে কর্মচারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন? ধর্মশাস্ত্র বলে, “যে ব্যক্তি অধীনস্থদের সুখী রাখতে সক্ষম, তার নেতৃত্বে কর্মস্থল একটি পবিত্র স্থান হয়ে ওঠে।”
আরেকটি উদাহরণ হতে পারে পরিবেশ রক্ষা। আজকের পৃথিবীতে পরিবেশ সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অথর্ববেদে বলা হয়েছে, “পৃথিবী আমাদের মা, এবং আমরা তার সন্তান। আমরা যদি তার যত্ন না করি, তবে সে আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।” রাজনীতির মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা যদি এই নীতিগুলি গ্রহণ করি, তবে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।
আমাদের শিক্ষার গুরুত্ব
আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি আজ থেকে সনাতন ধর্মের ধমনীতি অনুসরণ করতে শুরু করেন, তবে আপনার জীবন আরও সহজ এবং অর্থবহ হয়ে উঠবে। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ন্যায়পরায়ণতা, সততা এবং দায়িত্ববোধের শিক্ষা দিই, তবে একটি উন্নত সমাজ গড়া সম্ভব।
উপসংহার
আমাদের সনাতন ধর্ম শুধু ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনধারা। এটি কেবল পূজার আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের প্রতিদিনের আচরণ, চিন্তা এবং সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। তাই, আপনি যদি সত্যিই আপনার জীবনকে উন্নত করতে চান এবং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান, তবে সনাতন ধর্মের ধমনীতি গ্রহণ করুন।
শেষে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই: আপনি কি আজ থেকে সনাতন ধর্মের নীতিগুলি নিজের জীবনে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেবেন?