সনাতন ধর্মে অহিংসা এবং পরিবেশ রক্ষার সম্পর্ক কী?

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আমাদের প্রাচীন সনাতন ধর্মে অহিংসার শিক্ষা কেবল মানুষদের প্রতি নয়, প্রকৃতির প্রতিও কতটা গভীর এবং বিস্তৃত? আমি আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব, কিভাবে সনাতন ধর্মের অহিংসা দর্শন পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

অহিংসার মূল দর্শন

সনাতন ধর্মে অহিংসা বা হিংসা না করা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এই নীতির উৎস “মহাভারত”, “ভগবদ গীতা”, এবং “উপনিষদ”-এর মতো গ্রন্থে পাওয়া যায়।

উপনিষদে বলা হয়েছে:

“সর্বভূতেহিতে রতা:”অর্থাৎ সেই মহৎ ব্যক্তিরা প্রকৃত পূজার অধিকারী, যারা সকল জীবের মঙ্গল কামনা করেন।

অহিংসা কেবল শারীরিক হিংসা থেকে বিরত থাকার কথা বলে না; এটি আমাদের চিন্তা, কথা এবং কর্মেও হিংসার অনুপস্থিতি নির্দেশ করে। প্রকৃতির প্রতিটি জীব—গাছ, পশু, পাখি, এমনকি জলধারাগুলিও—এই নীতির অন্তর্ভুক্ত।

পরিবেশ রক্ষায় সনাতন ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি

পরিবেশ রক্ষা সনাতন ধর্মে একটি পবিত্র কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত। আমাদের শাস্ত্রগুলোতে বারবার বলা হয়েছে যে প্রকৃতি আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান।

ঋগ্বেদে বলা হয়েছে:

“মাতা ভূমি: পুত্রো’হম পৃথিব্যা:”—পৃথিবী আমার মাতা এবং আমি তার সন্তান।

এই উক্তিটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে আমরা মায়ের মতো পৃথিবীর যত্ন নিতে পারি না, তবে তার ক্ষতিও করতে পারি না।

অহিংসার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা

আপনারা কি জানেন, অহিংসার নীতিকে যদি আমরা পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োগ করি, তবে আমরা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারি? আমি এখানে কিছু উদাহরণ দিচ্ছি:

  • প্লাস্টিক বর্জন: প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অহিংসার নীতি অনুযায়ী, এটি প্রকৃতিকে হিংসা করার সামিল। আমরা যদি প্লাস্টিক ব্যবহার কমাই এবং বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করি, তাহলে প্রকৃতির প্রতি আমাদের অহিংস দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে।
  • বৃক্ষরোপণ: আপনি যখন একটি গাছ রোপণ করেন, তখন এটি কেবল পৃথিবীর সৌন্দর্য বাড়ায় না, এটি অসংখ্য প্রাণীর আশ্রয়ও দেয়। এই কাজ প্রকৃতির প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং অহিংস মনোভাবের নিদর্শন।
  • প্রাণী রক্ষা: পশু-পাখিদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং তাদের জীবন রক্ষা করা সনাতন ধর্মে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অহিংসার নীতিতে পশুহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আপনি কি খেয়াল করেছেন, এই একটি কাজই পরিবেশ রক্ষায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারে?

শাস্ত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি

সনাতন ধর্মের শাস্ত্রগুলিতে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য বার্তা রয়েছে।

মহাভারতে বলা হয়েছে:

প্রকৃতি রক্ষার্থে, জীবের রক্ষাই জীবের ধর্ম।”

ভগবদ গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে:

যে ব্যক্তি প্রকৃতির সৃষ্টিকে শ্রদ্ধা করে না, সে নিজেকেই ধ্বংস করে।”

এই সমস্ত উক্তি আমাদের বার্তা দেয় যে প্রকৃতির প্রতি হিংসা করা মানে আমাদের নিজের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলা।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আমার জীবনে একবার আমি একটি ছোট্ট ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, যা অহিংসা এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব আমাকে শিখিয়েছে। একদিন আমার বাড়ির সামনে একটি পাখি আহত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমি তাকে তুলে এনে তার যত্ন নিই। সেই পাখিটি সুস্থ হয়ে আবার উড়ে গিয়েছিল। সেদিন আমি অনুভব করলাম, প্রকৃতির প্রতি একটুখানি সহানুভূতি দেখানো কতটা তৃপ্তির। আপনারাও যদি এই ধরনের ছোট্ট উদ্যোগ নেন, তবে পৃথিবী সত্যিই সুন্দর হয়ে উঠবে।

আপনার কি করা উচিত?

আপনি কীভাবে সনাতন ধর্মের অহিংসা দর্শন অনুসরণ করে পরিবেশ রক্ষা করতে পারেন? কিছু সহজ পদক্ষেপ নিন:

  • প্লাস্টিক ব্যবহার কমান।
  • প্রতিটি উৎসব উদযাপন পরিবেশবান্ধব উপায়ে করুন।
  • পশুপাখি এবং গাছপালার প্রতি সদয় হোন।
  • জল সংরক্ষণ করুন এবং নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন।

একটি চমৎকার চিন্তা

আমাদের শাস্ত্রগুলো আমাদের একটি গভীর বার্তা দেয়: প্রকৃতি আমাদের মাতা, এবং মায়ের প্রতি হিংসা করে কোনো সন্তানই কখনো সফল হতে পারে না।

আমাদের কি এখনই ভাবা উচিত নয়, আমরা কি প্রকৃতির প্রতি যথেষ্ট অহিংস? আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

জয় সনাতন ধর্ম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top