ঋষিরা পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকতে বলে কীভাবে?

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে প্রকৃতির গভীর সংযোগ রয়েছে। সনাতন ধর্মের প্রাচীন ঋষিগণও এটি উপলব্ধি করেছিলেন এবং পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের কথা গভীরভাবে উল্লেখ করেছেন। আপনার জীবন যদি সনাতন ধর্মের আদর্শে পরিচালিত হয়, তবে পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজন। ঋষিদের শিক্ষা থেকে আমরা কীভাবে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারি, চলুন জেনে নিই।

ঋষিদের শিক্ষা ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব

সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে:

“মাতা ভূমিঃ পুত্রোঃ অহং পৃথিব্যাঃ।”
অর্থাৎ, “পৃথিবী আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান।”

এই উক্তিটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পরিবেশের প্রতি অবহেলা করা মানে নিজের মায়ের প্রতি অবজ্ঞা করা। আমি যখন প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালন করি, তখন আমি প্রকৃতপক্ষে নিজের জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করি।

প্রকৃতির প্রতি ঋষিদের আদর্শ

  •  বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষ সংরক্ষণ:
    ঋষিগণ বৃক্ষের গুরুত্ব সম্পর্কে বারবার বলেছেন। বেদে বলা হয়েছে:

“বৃক্ষো রক্ষতি রক্ষিতঃ।”
অর্থাৎ, “যে বৃক্ষকে রক্ষা করে, বৃক্ষও তাকে রক্ষা করে।”

আপনার যদি নিজের বাড়ির আশেপাশে একটি খালি স্থান থাকে, তবে বৃক্ষরোপণ করুন। প্রতিটি গাছ কেবলমাত্র পরিবেশকেই নয়, আমাদের মানসিক শান্তিকেও উন্নত করে।

  •  জল সংরক্ষণ:
    জলকে সনাতন ধর্মে পবিত্র ও শক্তিশালী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ঋষিদের মতে:

“আপঃ স্বস্তয় নমঃ।”
অর্থাৎ, “জল শান্তি এবং কল্যাণের উৎস।”

আপনি কি জানেন, প্রতিদিনের ছোটো ছোটো অভ্যাসের পরিবর্তন জল সংরক্ষণে অনেক অবদান রাখতে পারে? যেমন, হাত-মুখ ধোয়ার সময় কল বন্ধ রাখা।

  • প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার:
    ঋষিগণ বারবার বলেছেন, প্রকৃতিকে শোষণ না করে তার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলা উচিত। গীতা থেকে একটি বিখ্যাত উক্তি:

“ভোগো না ভূমিঃ কার্ষণায়।”
অর্থাৎ, “অযথা ভোগ প্রকৃতির ক্ষতি ডেকে আনে।”

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা এবং অপচয় কমালে পরিবেশের উপর কী পরিমাণ প্রভাব পড়ে?

পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ

আমি মনে করি, পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকার জন্য প্রথমে আমাদের নিজেদের জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ:

  • প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো:
    আপনি কি জানেন, প্লাস্টিক প্রায় ৪০০ বছরেও সম্পূর্ণরূপে অবনমিত হয় না? আমি চেষ্টা করি কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে এবং আপনাকেও এটি করতে উৎসাহ দিই।
  •  জৈব সার ব্যবহার:
    আপনার যদি বাড়িতে একটি ছোটো বাগান থাকে, তবে জৈব সার ব্যবহার করুন। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
  •  স্থানীয় পণ্যের ব্যবহার:
    স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করলে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। ঋষিরা সর্বদা স্থানীয় জিনিস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার একটি দৃষ্টান্ত।

ঋষিদের কিছু মূল্যবান কথা

সনাতন ধর্মে প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনের সম্পর্ককে উদযাপন করা হয়েছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি:

  • “পৃথিবী ধৈর্যশীল। পৃথিবীর মতো ধৈর্য ধরুন।”
  • “সূর্য সমস্ত প্রাণের উৎস, তার আলো ও শক্তি রক্ষা করুন।”
  • “প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নেয় না, সে শুধুই সাড়া দেয়।”

আপনি যদি এই উক্তিগুলি আপনার দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা অর্জন সহজ হবে।

পরিবেশ এবং আধ্যাত্মিকতা

ঋষিগণ পরিবেশকে আধ্যাত্মিকতার অংশ হিসেবে দেখেছেন। তারা বলতেন, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা হল ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার প্রথম ধাপ। আপনি যদি প্রকৃতিকে রক্ষা করেন, তবে প্রকৃতিও আপনাকে রক্ষা করবে।

“যে প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করে, সে সর্বদা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে।”

উপসংহার

আপনি কি কখনও ভেবেছেন, পৃথিবীকে আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কেমন রেখে যেতে চান? ঋষিদের আদর্শ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া মানে জীবনের সঙ্গে একাত্ম হওয়া।

পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকার মাধ্যমে আমরা শুধু পৃথিবীকেই নয়, আমাদের আত্মাকেও পরিশুদ্ধ করতে পারি। তাহলে, আজ থেকেই শুরু করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top